
ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এ ঘটনায় তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের নানা মাত্রায় সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে কমিশন।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনের সপ্তম তলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন সাক্ষ্য হতে প্রতীয়মান যে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের নামে অযথা কালক্ষেপণ করায় এবং সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে বিদ্রোহীরা নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করতে সমর্থ হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পিলখানার ভেতর থেকে আটকে পড়া অফিসার ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বারংবার অনুরোধ-আকুতি সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ফজলুর রহমান বলেন, এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায় যে তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। অপরাধ সংঘটনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল, যার ফলে তারা বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
তদন্ত কমিশন জানায়, তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান। গোয়েন্দা ব্যর্থতার স্বরূপ ও কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং আলামত ধ্বংস করার প্রয়াস প্রতীয়মান হয়েছে। এর পেছনে দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
কমিশনের সভাপতি বলেন, পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলাকালে কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করার মাধ্যমে বিদ্রোহ উসকে দিয়েছে। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সামরিক অফিসারদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস চালিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে সময়মতো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেত।